আবহমান বাঙলার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হলো লোকসঙ্গীত। আর লোকসঙ্গীতের গুরুত্বপূর্ণ শাখা বা ধারা হলো বাউল সঙ্গীত। বাউলরা তাদের সঙ্গীতের মধ্য দিয়েই তাদের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাউল দর্শনের উৎস নিহিত হৃদয় ধর্মে। দেহের মধ্যেই আছেন অন্তরবাসী দেবতা। মানুষে মানুষে ভেদ সৃষ্টিকারী প্রবৃত্তিসমূহকে ধ্বংস করে সোনার মানুষকে গড়তে পারলেই মনের মানুষকে পাওয়া সহজ হয়। মনের মানুষের সন্ধানে ব্রতী বাউলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন ফকির লালন শাহ। এজন্য তাঁকে বলা হয় বাউল শিরোমণি বা বাউল সম্রাট। লালনের সাধারণ পরিচয় তিনি একজন কবি, গীতিকার। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে তিনি শুধুই কবি নন, বরং জালাল উদ্দিন রুমী, আল্লামা ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের ন্যায় দার্শনিক কবি। কবিতা বা গানে কবি বা গীতিকারের আবেগ প্রাধান্য লাভ করে। কিন্ত লালনের গান তীক্ষ্ণ যুক্তির আশ্রয়ে রচিত হওয়ায় তা কেবল আবেগ সর্বস্ব নয়, বরং এক যুক্তিবাদী দর্শন। লালনের দর্শনে সন্নিবেশিত বিভিন্ন তত্তে¡র মধ্যে মানবতাবাদ অন্যতম। কিন্ত তাঁর মানবতাবাদী চিন্তা তাঁর সঙ্গীতের মধ্যে কীভাবে নিহিত ও প্রকাশিত, সে বিষয় আমাদের অনেকেরই অজানা। যে মানবতাবাদী চিন্তার জন্য লালন অধিকতর মহিমান্বিত হওয়ার দাবী রাখেন, নিবন্ধটি সে বিষয়েরই একটি পর্যালোচনা।